বর্তমানে আমরা বিভিন্ন প্রযুক্তি যেমন— বই, কলম, টেবিল, বৈদ্যুতিক বাতি, ঘড়ি ইত্যাদি ব্যবহার করে লেখাপড়া করছি। বৈজ্ঞানিক জ্ঞান ব্যবহার করে এসকল প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়েছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মধ্যে পার্থক্য কী? এদের মধ্যে কী সম্পর্ক রয়েছে ?
প্রশ্ন : প্রযুক্তির উদ্ভাবনে আমরা কীভাবে বিজ্ঞানকে ব্যবহার করি?
কাজ : বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যবহার
কী করতে হবে :
১. নিচের ছকের মতো করে একটি ছক তৈরি করি।
ব্যবহারের ক্ষেত্রসমূহ | প্রযুক্তি | বৈজ্ঞানিক জ্ঞান |
---|---|---|
পরিবহন | যেমন— গাড়ি | যেমন— তাপ শক্তি, যান্ত্রিক শক্তি |
চিকিৎসা | ||
কৃষি | ||
বাসাবাড়ি |
২. ছকে উল্লেখিত ক্ষেত্রসমূহে কোন কোন প্রযুক্তি এবং বৈজ্ঞানিক জ্ঞান ব্যবহৃত হয় তার তালিকা তৈরি করি।
৩. কাজটি নিয়ে সহপাঠীদের সাথে আলোচনা করি।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির পার্থক্য
বিজ্ঞান হলো প্রকৃতি সম্পর্কিত জ্ঞান যা পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে প্রাকৃতিক ঘটনাকে ব্যাখ্যা এবং বর্ণনা করে। প্রাকৃতিক ঘটনা সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে বিজ্ঞানীরা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ করেন। যার মধ্যে নিম্নোক্ত ধাপসমূহ রয়েছে।
বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি
ধাপসমূহ | বিবরণ |
---|---|
পর্যবেক্ষণ | আমাদের চারপাশের পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করার মধ্য দিয়ে আমরা প্রাকৃতিক ঘটনা কিংবা নিজের | পছন্দের কোনো বিষয় সম্পর্কে কৌতুহল বোধ করি । |
প্রশ্নকরণ | যখন আমরা কোনো কিছু দেখি, শুনি বা পড়ি আমাদের মনে এ সম্পর্কিত নানা প্রশ্ন আসতে পারে। এ | সকল প্রশ্ন থেকে এমন একটি প্রশ্ন বেছে নেই যার উত্তর পর্যবেক্ষণ বা পরীক্ষণের মাধ্যমে পাওয়া সম্ভব। |
অনুমান | পূর্ব অভিজ্ঞতা ব্যবহার করে প্রশ্নটির সম্ভাব্য উত্তর ঠিক করি এবং খাতায় লিখি। এটিই অনুমান |
পরীক্ষণ | অনুমানটি সঠিক কি না তা যাচাই করার জন্য একটি পরীক্ষার পরিকল্পনা করি। পরীক্ষাটি করার জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ সংগ্রহ করি। পরীক্ষাটি সম্পাদন করি। তথ্য সংগ্রহ করে পরীক্ষার | ফলাফল লিপিবদ্ধ করি। |
সিদ্ধান্ত গ্রহণ | প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করি এবং ফলাফলের সারসংক্ষেপ করি। ফলাফলটি অনুমানের সাথে মিলেছে কিনা তা যাচাই করি। |
বিনিময় | প্রাপ্ত ফলাফল এবং গৃহিত সিদ্ধান্ত অন্যদের সাথে বিনিময় করি । |
প্রযুক্তি হলো আমাদের জীবনের বাস্তব সমস্যা সমাধানের জন্য বিজ্ঞানের ব্যবহারিক প্রয়োগ। প্রযুক্তি মানুষের জীবনের মানোন্নয়নে বিভিন্ন পণ্য, যন্ত্রপাতি এবং পদ্ধতির উদ্ভাবন করে। যেমন— বিজ্ঞানীরা বিদ্যুৎ নিয়ে গবেষণা করে এ সম্পর্কে আমাদের ধারণা বা জ্ঞান সৃষ্টি করেছেন। এই বৈজ্ঞানিক জ্ঞান আবার ফ্রিজ, টেলিভিশন, মোবাইল এবং বৈদ্যুতিক বাতি উদ্ভাবনে কাজে লাগানো হয়েছে। প্রযুক্তি ব্যবহারের নানান ক্ষেত্র রয়েছে। যেমন— শিক্ষা, চিকিৎসা, যোগাযোগ, যাতায়াত ইত্যাদি।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সম্পর্ক
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উদ্দেশ্য ভিন্ন হলেও আমাদের জীবনে এদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এরা পরস্পরের সাথে নিবিড়ভাবে সম্পর্কিত।
অতীতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সম্পর্ক এত নিবিড় ছিল না। বিজ্ঞানীরা প্রকৃতি নিয়ে গবেষণা করেছেন এবং বিভিন্ন ঘটনার ব্যাখ্যা দিয়েছেন। সেখানে ব্যবহারিক জীবনের সমস্যা সমাধানের কোনো উদ্দেশ্য ছিল না। তাঁরা বিদ্যুৎ এবং আলোর মতো বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক জ্ঞান আবিষ্কার করেছেন। অপরদিকে, জীবনকে উন্নত করার লক্ষ্যে বাস্তব সমস্যা সমাধানের জন্য মানুষ প্রযুক্তির উদ্ভাবন করেছে। তারা পাথরের হাতিয়ার, আগুন, পোশাক, ধাতব যন্ত্রপাতি এবং চাকার মতো সরল প্রযুক্তির উদ্ভাবন করেছে।
আঠারো শতকে শিল্পবিপ্লবের সময়কালে প্রযুক্তির ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। বিশেষ করে কৃষি, শিল্পকারখানা, পরিবহন ইত্যাদি ক্ষেত্রে। বিজ্ঞানীদের আবিষ্কৃত জলীয় বাষ্পের ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে মানুষ বাষ্পীয় ইঞ্জিন উদ্ভাবন করেছে। এই বাষ্পীয় ইঞ্জিন কলকারখানা, রেলগাড়ি ও জাহাজ চালাতে ব্যবহার করা হতো।
বিভিন্ন পণ্য এবং প্রযুক্তি উদ্ভাবনে মানুষ বৈজ্ঞানিক জ্ঞান ব্যবহার করে থাকে। বিজ্ঞানীরা প্রকৃতি নিয়ে গবেষণার সময়ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে থাকেন। যেমন— দূরবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে বিজ্ঞানীরা মহাকাশের বিভিন্ন বস্তু পর্যবেক্ষণ করতে সক্ষম হয়েছেন। খালি চোখে দেখা যায় না এমন জিনিস অনুসন্ধানে বিজ্ঞানীরা অণুবীক্ষণ যন্ত্র ব্যবহার করে থাকেন। বর্তমানকালে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি একে অপরের উপর নির্ভরশীল।
খাদ্য চাহিদা পূরণের জন্য মানুষ বিভিন্ন ধরনের কৃষি প্রযুক্তির উদ্ভাবন করেছে।
যান্ত্রিক প্রযুক্তি
চাষাবাদের জন্য মানুষ বিভিন্ন কৃষি প্রযুক্তি যেমন— শাবল, কোদাল, লাঙল উদ্ভাবন করেছে। বর্তমানে ট্রাক্টর, সেচ পাম্প বা ফসল মাড়াইয়ের যন্ত্রের মতো আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি মানুষ ব্যবহার করছে। এই সব যন্ত্রপাতি মানুষকে স্বল্প সময়ে অধিক খাদ্য উৎপাদনে সাহায্য করছে।
রাসায়নিক প্রযুক্তি
বাড়তি উৎপাদনের জন্য অনেক ফসলে রাসায়নিক সার এবং কীটনাশক ব্যবহার করা হয়। রাসায়নিক সার উদ্ভিদের ভালো বৃদ্ধিতে এবং অধিক ফসল উৎপাদনে সহায়তা করে। রাসায়নিক পদার্থ ফসলের ক্ষতিকারক পোকা ও আগাছা দমন করে অধিক খাদ্য উৎপাদনে ভূমিকা রাখছে ।
জৈব প্রযুক্তি
মানুষের কল্যাণে নতুন কিছু উৎপাদনে জীবের ব্যবহারই হলো জৈব প্রযুক্তি। যেমন— জৈব প্রযুক্তির মাধ্যমে বিশেষ বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন উদ্ভিদ সৃষ্টি করা হচ্ছে। এই প্রযুক্তি মানুষকে অধিক পুষ্টিসমৃদ্ধ, পোকামাকড় প্রতিরোধী এবং অধিক ফলনশীল উদ্ভিদ উৎপাদনে সহায়তা করছে।
কৃষি প্রযুক্তির ব্যবহার কীভাবে খাদ্য উৎপাদনে সাহায্য করছে ?
১. নিচের ছকটির মতো করে একটি ছক তৈরি করি ।
কৃষি প্রযুক্তি | কীভাবে খাদ্য উৎপাদনে সাহায্য করে |
---|---|
যান্ত্রিক প্রযুক্তি | |
রাসায়নিক প্রযুক্তি | |
জৈব প্রযুক্তি |
২. খাদ্য উৎপাদনে কৃষি প্রযুক্তি কীভাবে সাহায্য করে তার তালিকা তৈরি করি।
৩. সহপাঠীদের সাথে আলোচনা করে কাজটি সম্পন্ন করি।
প্রযুক্তি বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করে মানুষের জীবনকে নিরাপদ, উন্নত ও আরামদায়ক করেছে। প্রযুক্তি আবার নানারকম সমস্যাও সৃষ্টি করছে।
পরিবেশ দূষণ
বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে কয়লা পুড়িয়ে আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদন করি কিন্তু এর ফলে বায়ুও দূষিত হয়। বায়ু দূষণ বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও এসিড বৃষ্টির মতো পরিবেশের উপর বিভিন্ন ক্ষতিকর প্রভাব সৃষ্টি করছে। রাসায়নিক সার এবং কীটনাশক অধিক খাদ্য উৎপাদনে সাহায্য করে। এগুলো ব্যবহারের ফলে আবার মাটি এবং পানি দূষিত হয় যা জীবের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
অস্ত্র তৈরি
আধুনিক প্রযুক্তির সবচেয়ে ভয়াবহ প্রয়োগ হলো যুদ্ধের অস্ত্র তৈরি ও এর ব্যবহার। যেমন— বন্দুক, বোমা, ট্যাংক ইত্যাদি।
অন্যান্য ক্ষতিকর প্রভাব
অনেক সময় প্রযুক্তির ব্যবহার নেশায় পরিণত হয়। টেলিভিশন ও কম্পিউটারের ব্যবহার যদি ভালো কাজে নিয়োজিত না হয়, তা আমাদের সময়ের অপচয় ঘটায়। নিয়মিত খেলাধুলা, ব্যায়াম ও মুক্তচিন্তার পথে প্রযুক্তি বাধা সৃষ্টি করে। এক নাগাড়ে এক ঘণ্টার বেশি টেলিভিশন দেখা বা কম্পিউটার ব্যবহার করা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
প্রযুক্তির ক্ষতিকর প্রভাব কী কী?
১. নিচে ছকের মতো করে একটি ছক তৈরি করি।
প্রযুক্তির ক্ষতিকর প্রভাবসমূহ |
---|
২. ছকে প্রযুক্তির বিরূপ প্রভাবসমূহের একটি তালিকা তৈরি করি।
৩. সহপাঠীদের সাথে আলোচনা করে কাজটি সম্পন্ন করি।
১) বিজ্ঞানীরা কীভাবে প্রকৃতি নিয়ে গবেষণা করেন ?
২) অল্প সময়ে অধিক উৎপাদনের জন্য মানুষ কোন কোন কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহার করে ?
৩) প্রযুক্তির ক্ষতিকর প্রভাবের দুইটি উদাহরণ দাও ।
৪) মহাকাশ সম্পর্কে পর্যবেক্ষণের জন্য বিজ্ঞানীরা কোন প্রযুক্তি ব্যবহার করেন ?
৫) জলীয় বাষ্পের ক্ষমতা সম্পর্কিত বৈজ্ঞানিক জ্ঞানকে কীভাবে কাজে লাগানো হয়েছে ?
১) বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির পার্থক্য ব্যাখ্যা কর।
২) কৃষি প্রযুক্তি কীভাবে আমাদের জীবনমান উন্নত করে?
৩) প্রযুক্তি কীভাবে বিজ্ঞানের জ্ঞানকে ব্যবহার করে ?
৪) বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উদ্দেশ্য ভিন্ন হলেও তারা কীভাবে পরস্পর সম্পর্কযুক্ত ব্যাখ্যা কর ।